ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গেলে এমন দৃশ্যই দেখা যায় গ্রাম কৃষ্ণনগর সবজি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোর থেকেই সবজি ক্ষেতে নারী-পুরুষসহ সব বয়সীদের ছুটোছুটি। কেউ সবজি বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজি ক্রয় করতে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ছুটে আসবে। তাই তারা ভোর থেকেই বিক্রির জন্য সবজি প্রস্তুত রাখেন। আবার কেউ কেউ সবজি নিয়ে স্থানীয় বাজারে ও বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার ধরখার ইউপির কৃষ্ণনগর গ্রামে গেলে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। এ গ্রামের বেশিরভাগ চাষিরা সবজি চাষে এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, লালশাক, টমেটো, শিম, লাউসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষে স্থানীয় চাষীরা এক ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফলন ভালো হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির আবাদ। কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা কিন্তু সবজি চাষ করে না এমন পরিবার মেলা ভার। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এ সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হচ্ছে।

এ চাষে খরচ কম লাভ বেশী হওয়ায় গ্রামের লোকজন ধানচাষের বদলে সবজি চাষের দিকেই ঝুঁকছেন। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে সবজি চাষের পরিধি। শীতের সবজি ভরা মৌসুম হওয়ায় মাঠ জুড়ে শুধু সবজি আর সবজি। তাই কৃষ্ণনগর গ্রামটি সবজি গ্রাম নামে বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আব্দুল মান্নান, আব্দুল জলিল, ইউসুফ মিয়া, মো. হোসেন মিয়াসহ অনেক কৃষক সবজি পরিচর্যাসহ বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সবজির পরিচর্যাসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন।

চাষী মো. আব্দুল মান্নান বলেন, এ মৌসুমে দেশীয় পদ্ধতিতে ১৫০ শতক  জমিতে ফুলকপি, মুলা, লালশাক, টমেটোসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করছি। ১০ হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছি। সবজি গাছের অবস্থা এখন পযর্ন্ত খুবই ভালই রয়েছে। প্রতিটি গাছে একটি করে ফুলকপি ফলন হয়। অন্যদিকে মুলা, লালশাক, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে আশা করছি দুই লাখ টাকার বেশি আয় হবে।

তিনি আরো বলেন, ওই জমিতে যদি ধান আবাদ করা হতো তাহলে ৫০ হাজার টাকার ধানও পাওয়া যেতো না। তাই ধান ছেড়ে সবজি আবাদ করছি।

কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ১৫ বছর ধরে এলাকায় সবজি চাষ করছি। এখানকার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেচ সুবিধা ভাল পানির অভাব নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে সবজি চাষ করা যায়। এ বছর বীজতলাসহ প্রায় ১৫০ শতক জমিতে শীতকালীন বাঁধাকপি, লাউ, মুলা, লালশাকসহ নানান সবজি আবাদ করা হয়। আশা করছি আগেরবারের চেয়ে এবার আরো লাভবান হবো।

মো. হোসেন মিয়া বলেন ধান চাষে লোকসান হওয়ায় ১১বছর ধরে সবজি চাষ করছি। সবজি চাষে ধানের চেয়ে খরচ কম, লাভ বেশি। এ পযর্ন্ত মুলা লালশাক ৪০ হাজার টাকার উপর বিক্রি করা হয়েছে। ফুলকপি ১৫-২০ দিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে যাবতীয় খরচ বাদে এ মৌসুমে আশা করছি আড়াই লাখ টাকার উপর আয় হবে।

মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, ধান ও পাট চাষে ভাল ফলন না হওয়ায় নানা প্রকার সবজি আবাদ করা হচ্ছে।  সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বছরে দেড় লাখ টাকার উপর আয় হয়। দেশীয় পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এখানকার সবজির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই বিক্রিতে দামও ভালো পাওয়া যায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, কৃষ্ণনগর গ্রাম সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দীর্ঘ সময় ধরে স্থানীয় কৃষকরা সবজি চাষ করে আসছেন। এসব এলাকার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি আবাদে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। আবহাওয়া অনুকূল এবং  বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি আবাদে কৃষকরা লাভবান হবেন। এছাড়াও সবজি চাষের ফলন ভাল করতে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গেলে এমন দৃশ্যই দেখা যায় গ্রাম কৃষ্ণনগর সবজি

আপডেট টাইম : ০৯:৩০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোর থেকেই সবজি ক্ষেতে নারী-পুরুষসহ সব বয়সীদের ছুটোছুটি। কেউ সবজি বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজি ক্রয় করতে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ছুটে আসবে। তাই তারা ভোর থেকেই বিক্রির জন্য সবজি প্রস্তুত রাখেন। আবার কেউ কেউ সবজি নিয়ে স্থানীয় বাজারে ও বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার ধরখার ইউপির কৃষ্ণনগর গ্রামে গেলে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। এ গ্রামের বেশিরভাগ চাষিরা সবজি চাষে এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, লালশাক, টমেটো, শিম, লাউসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষে স্থানীয় চাষীরা এক ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফলন ভালো হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির আবাদ। কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা কিন্তু সবজি চাষ করে না এমন পরিবার মেলা ভার। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এ সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হচ্ছে।

এ চাষে খরচ কম লাভ বেশী হওয়ায় গ্রামের লোকজন ধানচাষের বদলে সবজি চাষের দিকেই ঝুঁকছেন। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে সবজি চাষের পরিধি। শীতের সবজি ভরা মৌসুম হওয়ায় মাঠ জুড়ে শুধু সবজি আর সবজি। তাই কৃষ্ণনগর গ্রামটি সবজি গ্রাম নামে বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আব্দুল মান্নান, আব্দুল জলিল, ইউসুফ মিয়া, মো. হোসেন মিয়াসহ অনেক কৃষক সবজি পরিচর্যাসহ বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সবজির পরিচর্যাসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন।

চাষী মো. আব্দুল মান্নান বলেন, এ মৌসুমে দেশীয় পদ্ধতিতে ১৫০ শতক  জমিতে ফুলকপি, মুলা, লালশাক, টমেটোসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করছি। ১০ হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছি। সবজি গাছের অবস্থা এখন পযর্ন্ত খুবই ভালই রয়েছে। প্রতিটি গাছে একটি করে ফুলকপি ফলন হয়। অন্যদিকে মুলা, লালশাক, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে আশা করছি দুই লাখ টাকার বেশি আয় হবে।

তিনি আরো বলেন, ওই জমিতে যদি ধান আবাদ করা হতো তাহলে ৫০ হাজার টাকার ধানও পাওয়া যেতো না। তাই ধান ছেড়ে সবজি আবাদ করছি।

কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ১৫ বছর ধরে এলাকায় সবজি চাষ করছি। এখানকার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেচ সুবিধা ভাল পানির অভাব নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে সবজি চাষ করা যায়। এ বছর বীজতলাসহ প্রায় ১৫০ শতক জমিতে শীতকালীন বাঁধাকপি, লাউ, মুলা, লালশাকসহ নানান সবজি আবাদ করা হয়। আশা করছি আগেরবারের চেয়ে এবার আরো লাভবান হবো।

মো. হোসেন মিয়া বলেন ধান চাষে লোকসান হওয়ায় ১১বছর ধরে সবজি চাষ করছি। সবজি চাষে ধানের চেয়ে খরচ কম, লাভ বেশি। এ পযর্ন্ত মুলা লালশাক ৪০ হাজার টাকার উপর বিক্রি করা হয়েছে। ফুলকপি ১৫-২০ দিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে যাবতীয় খরচ বাদে এ মৌসুমে আশা করছি আড়াই লাখ টাকার উপর আয় হবে।

মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, ধান ও পাট চাষে ভাল ফলন না হওয়ায় নানা প্রকার সবজি আবাদ করা হচ্ছে।  সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বছরে দেড় লাখ টাকার উপর আয় হয়। দেশীয় পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এখানকার সবজির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই বিক্রিতে দামও ভালো পাওয়া যায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, কৃষ্ণনগর গ্রাম সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দীর্ঘ সময় ধরে স্থানীয় কৃষকরা সবজি চাষ করে আসছেন। এসব এলাকার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি আবাদে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। আবহাওয়া অনুকূল এবং  বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি আবাদে কৃষকরা লাভবান হবেন। এছাড়াও সবজি চাষের ফলন ভাল করতে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।